আমরা কমবেশি সবাই বিষণ্ণতায় ভুগি।যে কোন দেশের শহরাঞ্চলের মানুষ বেশি বিষণ্ণতায় ভোগে। প্রাপ্ত বয়স্কদের বিষণ্ণতা সহজে বোঝা গেলেও শিশুদের ক্ষেত্রে তা কঠিন।
বিষণ্ণতার কারণ কী?
বহু কাল ধরেই বিষণ্ণতার কারণ খুঁজে বের করতে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা। সহজে বলতে গেলে বিষণ্ণতা হলো মুড ডিসঅর্ডার বা মেজাজের ব্যাধি বলা যায়। মানুষের দুঃখ, ক্রোধ এবং নিরাপত্তাহীনতা অনুভূতির সাথে যুক্ত থাকে এই অসুখ। এছাড়াও কয়েকটি কারণে বিষণ্ণতা বাসা বাধতে পারে শরীরে।
জিনগত কারণ
পরিবারের সদস্যদের কারও বিষণ্ণতা থাকলে শিশুরও তা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর নিকট আত্মীয়ের বিষণ্ণতার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের বিষণ্ণতায় ভোগার সম্ভাবনা ৭০ ভাগ।
ট্রমা
ব্যক্তি জীবনে ঘটা দুর্ঘটনা, প্রিয়জন হারানো, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েও অনেকে বিষণ্ণতায় ভোগেন।
মস্তিষ্কের গঠন
মস্তিষ্কের সামনের লব কম সক্রিয় থাকলে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার ঝুঁকি বেশি থাকে।
শারীরিক অসুস্থতা
অনিদ্রা, বাতের ব্যথা, এডিএইচডি সিনড্রোম প্রভৃতি অসুখ বিষণ্ণতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
মাদক গ্রহণ
নিয়মিত মাদকদ্রব্য নেয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৩০% লোক বিষণ্ণতায় ভোগেন।
সামাজিক অবস্থান
অর্থনৈতিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যার কারণেও বিষণ্ণতার বিকাশ ঘটতে পারে।
বিষণ্ণতার লক্ষণ
মানসিক ও শারীরিক, দুই ধরণের লক্ষণ দ্বারা বিষণ্ণতা প্রকাশ পায়। বিষণ্ণতার শারীরিক লক্ষণগুলো হলো:
মাথাব্যথা;
পিঠে ব্যথা;
পেশীতে টান;
ক্ষুধামন্দা;
ওজন হ্রাস বৃদ্ধি;
বদ হজম;
মারাত্মক ক্লান্তি;
অনিদ্রা;
অসাড়তা;
বিষণ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে উদাসীনতা,একাকীত্ব, দ্রুত মেজাজ হারানো, অমনোযোগীসহ নানা লক্ষণ দেখা যায়।
বিষণ্ণতার চিকিৎসা
বিষণ্ণতা একটি গুরুতর অসুস্থতা। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে ব্যক্তির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। তবে, যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহের থেরাপি দিলে অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়। তবে অবশ্যই তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
সাইকোথেরাপি
বিষণ্ণতা চিকিৎসায় সবচেয়ে পরিচিত পদ্ধতি সাইকোথেরাপি। এন্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের পাশাপাশি এই চিকিৎসা সহায়ক হতে পারে। সিবিটি পদ্ধতিতে বিষণ্ণতা নিরাময় কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। সিবিটি হ'ল বর্তমান সময়কে কেন্দ্র করে এবং সমস্যা সমাধানে, রোগীকে তার চিন্তাভাবনার উন্নতি করতে সহায়তা করে।
ওষুধের চিকিৎসা
বিষণ্ণতা মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে সর্বাধিক ব্যবহৃত ওষুধ এন্টিডিপ্রেসেন্টস। মস্তিষ্কের রসায়ন পরিবর্তন করে প্রথম সপ্তাহ থেকেই রোগীর উন্নতি করতে সহায়তা করে। চিকিৎসার প্রথম দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এন্টিডিপ্রেসেন্টগুলোর কার্যকারিতা দেখা যায়। সাধারণত রোগীদের কমপক্ষে ছয় মাস ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি. এই পদ্ধতিও বিষণ্ণতা জটিল পর্যায়ে চলে গেলে ব্যবহার করা হয়। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞসহ পেশাদার চিকিৎসকদের মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয়।
একটি শিশুর বিষণ্ণতা বড় হওয়ার সাথে সাথে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার থেকে শিশুকে আদর যত্নে মানুষ করলে বিষণ্ণতা থেকে অনেকটাই মুক্তি সম্ভব।
(বিঃদ্রঃ যেকোন চিকিৎসার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। )
স্বাস্থ্য সেবা, নারী স্বাস্থ্য, শিশু সেবা সম্পর্কিত আর্টিকেল লিস্ট
১। শিশুদের বিষণ্ণতা: উপসর্গ, কারণ ও চিকিৎসা
২। নারীদের অতিরিক্ত ঘামঃ কারণ ও চিকিৎসা
৩। রুক্ষ চুলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা: কিছু সহজ উপায়
৪। শিশুদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতি: লক্ষণ এবং চিকিৎসা
৫। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা: কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা
৬। শুষ্ক ঠোঁট: কারণ ও প্রতিকার
৭। চুলের যত্নে নারকেল তেল- ব্যবহার ও সুবিধা
৮। ডায়াবেটিস ডায়েট- যে তথ্যগুলো জানা আবশ্যক
৯। বাচ্চাদের ত্বক সুস্থ রাখতে মায়েদের যা জানা উচিত
১০। সুস্থ লিভারের জন্য কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত এবং এড়ানো উচিত
১১। শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি পূরণে করণীয়
১২। গ্যাস্ট্রাইটিস: কী খাওয়া উচিত এবং কী এড়ানো উচিত
১৩। বাচ্চাদের ক্ষুধামন্দা- কারণ ও চিকিৎসা
১৪। ব্রণ: প্রাকৃতিক প্রতিকার
১৫। পেশী ব্যথা (মায়ালজিয়া): কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার
১৬। নখের সমস্যার প্রাকৃতিক প্রতিকার
১৭। গ্রিন টি পানের কিছু অজানা সুবিধা
১৮। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে যেসব মিথ্যা ধারণা রয়েছে
১৯।গর্ভবতী নারীদের যে ফলগুলো খাওয়া উচিত নয়
২০। গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথা: কখন স্বাভাবিক এবং কখন উদ্বেগের