শিশুদের সংবেদনশীল শরীরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটটি দেখা দেয়। গবেষণা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ঘাটতি- আয়রনের ঘাটতি। এটি সাধারণত দুর্বল খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেয়া শিশু বা বয়ঃসন্ধিকালেও এই ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতার নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ চিকিৎসায় তা ভালো হয়।
রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলো কী কী?
আয়রনের অভাবে লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়। এটি ফুসফুস থেকে শরীরের সমস্ত টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহনে বাঁধা সৃষ্টি করে। এই ঘাটতি ফেরিক অ্যানিমিয়া হিসেবে পরিচিত এবং এটি শিশুদের মধ্যে খুব সাধারণ।
রক্তস্বল্পতার নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো সহজেই সনাক্ত করা যায়:
ক্ষুধামন্দা;
শ্বাসযন্ত্রের অসুবিধা;
মাথাব্যথা;
ফ্যাকাশে ত্বক এবং ঠোঁট;
বারবার সংক্রমণ;
রক্ত ক্ষয় (আঘাত বা মলের মাধ্যমে);
অত্যধিক ঘামা;
হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি;
অসময়ে ক্ষুধা;
জিহ্বার ফোলাভাব;
নখ দুর্বল হয়ে যাওয়া;
ক্ষত নিরাময়ে ধীরগতি;
যে কারণে শিশুদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতি হয়
বয়স: তিন বছরের কম বয়সী শিশুরা, যারা অতিরিক্ত গরুর দুধ পান করে, তাদের আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
বয়ঃসন্ধিকাল: বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীরাও মাসিকের কারণে রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারে।
অন্য অসুখের কারণে: যেসব শিশুর রক্তজনিত রোগ রয়েছে, সেসব শিশুর আয়রনের ঘাটতির ঝুঁকি বেশি।
আয়রনের ঘাটতি নির্ণয়
শিশুদের আয়রনের ঘাটতিজনিত রোগ নির্ণয় শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয়। এরপর, রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
আয়রনের ঘাটতি নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত পরীক্ষাগার পরীক্ষাগুলো হল:
হোমোলিউকোগ্রাম- রক্তস্বল্পতা নির্ণয়ের একটি জটিল ও কার্যকর পদ্ধতি এটি।
বোন ম্যারো অ্যাসপিরেশন- এটি অ্যাপ্লাস্টিক রক্তস্বল্পতা সনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা পদ্ধতি।
হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস- লিউকেমিয়া নির্ণয়ের জন্য বহুল ব্যবহৃত আরেকটি পদ্ধতি এটি;
হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস– এই পদ্ধতিতে অস্বাভাবিক লাল রক্তকণিকা চিহ্নিত করা হয়;
রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা এবং প্রতিকার
রক্তস্বল্পতা চিকিৎসা প্রথম পর্যায়ে, দেহে আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেয়া হয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে আয়রনযুক্ত খাবার গ্রহণ করে,বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেও হতে পারে। তবে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
রক্তস্বল্পতা চিকিৎসায় সেসব খাবার খাবেন:
টাটকা ফল- আঙ্গুর, ডুমুর, বরই, স্ট্রবেরি, বাঙ্গি;
টক ফল- আঙ্গুর, বরই, এপ্রিকট, পীচ;
সীফুড- চিংড়ি, ঝিনুক;
শাকসবজি- পালং শাক, বাঁধাকপি, মসুর, মিষ্টি আলু, মটরশুঁটি;
বীজ- সয়াবিন বীজ, কুমড়োর বীজ;
সিরিয়াল- ব্রান, ওটস, কর্ন, রাই;
মাছ-মাংস- মুরগী এবং গো-মাংস (গিলা, কলিজা, ফুসফুস), মাছ।