একজন নারীর গর্ভাবস্থার সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময়ে শুধু শারীরিকই নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আসে। এসময়ে হবু মায়েদের দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। রক্তস্বল্পতার কারণেও এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। লক্ষণ ও উপসর্গগুলো বাড়তে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
গর্ভবতী নারীদের রক্তস্বল্পতার কারণ
আয়রনের ঘাটতির কারণে গর্ভাবস্থায় একজন নারীর রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। মূলত আয়রনযুক্ত খাবার কম খেলে রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারেন গর্ভবতী মা। তবে কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা পূর্ববর্তী গর্ভধারণের কারণেও রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তবে, ভিটামিন, খনিজ এবং পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
গর্ভাবস্থার যে কোনও সময় রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসের মধ্যে বেশি হয়। যদিও গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা কোনও রোগ হিসাবে বিবেচিত হয় না, তবে ভ্রূণের উপর এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি ভ্রূণের বিকাশকেও প্রভাবিত করতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, শিশুর অসময়ের জন্ম এবং শিশুর জ্ঞানীয় বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে।
গর্ভবতী মহিলাদের রক্তস্বল্পতার লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার নির্দিষ্ট কতোগুলো লক্ষণ রয়েছে। ক্লান্তি, স্বল্পমাত্রার মাইগ্রেন, ব্যায়ামের সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া রক্তস্বল্পতার লক্ষণ। টেচিকার্ডিয়া বা হাইপোটেনশন, কিংবা আরও গুরুতর ক্ষেত্রে মনোযোগের ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য সাধারণ লক্ষণগুলো হল: অতিরিক্ত ক্ষুধা, কানে অযাযিত শব্দ এবং উদ্বেগ।
গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা
সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হলে রক্তস্বল্পতা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চিকিৎসা না করা হলে, প্রসবোত্তর সময়ে মা বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে।
নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা নির্ণয় করে চিকিৎসা সম্ভব। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মায়ের দেহে লোহিত রক্ত কোষের হারের পাশাপাশি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার মাধ্যমে সারা শরীরে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন বহনকারী লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে আয়রনের মাত্রা সম্পর্কে দরকারি তথ্য পাওয়া যায়।
এসব ক্ষেত্রে, আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেন চিকিৎসকেরা। লাল মাংস, সবুজ শাকসবজি, শস্য জাতীয় খাদ্য এবং ডিম ভালো কাজ দেয়। অন্যদিকে, ব্ল্যাক টি, কফি এবং কার্বনেটেড পানীয় যাতে ট্যানিন থাকে সেগুলো এড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এসব খাদ্য দেহে আয়রন শোষণে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ভিটামিন এবং আয়রনযুক্ত বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
No comments:
Post a Comment